Saturday, January 1, 2011

একতা উন্নয়ন সংঘ: স্বপ্ন ১০০ শয্যার একটি হাসপাতাল করার

একতা উন্নয়ন সংঘ:স্বপ্ন ১০০ শয্যার একটি হাসপাতাল করারতৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৩ সালে ৪০ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। এরই মধ্যে তারা করেছে কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা, স্থাপন করেছে দাতব্য চিকিৎসালয়, উদ্যোগ নিয়েছে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার। যৌতুক প্রথা বন্ধ করতেও কাজ করছে তারা, সঙ্গে আছে এলাকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিশ্চিত করার আয়োজনও। মোর্শেদ শাওনসারা দেশ থেকে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ভিড় জমায় এ শহরে। ব্যস্ততম এ নগরীর আবাসিক এলাকাগুলোতেও সমস্যার কোনো শেষ নেই। দেখা যায় না প্রতিবেশীদের মধ্যেও খুব একটা সুসম্পর্ক। পাশের ফ্ল্যাটে কে থাকছেন, অনেক ক্ষেত্রে তাও হয়তো থাকে অজানা। কারো বিপদ-আপদের খবরটাও অন্যের কানে পেঁৗছায় না। তাই তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্যে স্থানীয় সংগঠনগুলো রাখতে পারে প্রয়োজনীয় ভূমিকা। মহল্লাভিত্তিক উন্নয়নেও স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি এ সংগঠনগুলোর ভূমিকা বেশ উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের আবাসিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেও এ সংঘগুলোর রয়েছে নানা উদ্যোগ। এমনই একটি সমাজ উন্নয়নমূলক সংগঠন 'একতা উন্নয়ন সংঘ'।
১৯৭৩ সালে মাত্র ৪০ জন প্রাথমিক সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল সংগঠনটি। আর এখন তাদের সদস্য সংখ্যা ২০০। এ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন একসময়ের ঢাকা সিটি করপোরেশনের স্বনামধন্য মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। তাঁর আদর্শ, পরিকল্পনা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলো আজও ধরে রেখেছেন বর্তমান সভাপতি সুলতান আহম্মেদ মোল্লা এবং সংগঠনের অন্য সদস্যরা। পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার লেনে স্থাপিত এ সংঘের কার্যালয়, নিবন্ধন নং-ঢ-০৫৮৯।
সংগঠনের অন্যতম সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা আ. রাজ্জাক বলেন তাঁদের কার্যক্রম সম্পর্কে, 'এখানে একসময় নিরাপত্তাব্যবস্থাটা খুব নাজুক ছিল। চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা কানে আসত প্রায় প্রতিদিনই। সঠিক বিচার ও প্রতিবাদের অভাবে এ অবস্থা দিন দিন বাড়তে থাকে এবং এলাকার বসবাসকারীদের মধ্যেও হরহামেশাই ঝগড়া-বিবাধ লেগে থাকত। এ সব সমস্যা নিরসন করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় আমাদের সংগঠনটি।' তাই এখন স্থানীয়দের নিরাপত্তার স্বার্থে কমিউনিউটি পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণে এলাকায় এখন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শোনা যায় খুবই কম। সংঘের কার্যালয়ে ছোটখাটো বিচার ও ঝগড়া-বিবাদের মীমাংসাও হয়। সমাজের যেসব শিশু অর্থের অভাবে পাচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষাটাও, পরিবারের হাল ধরতে করছে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ_এ দরিদ্র শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়ার জন্য সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে সংঘের কার্যালয়ে। এলাকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বিবেচনা করে ক্লাবের সদস্যদের নিজস্ব অর্থায়নে পয়োনিষ্কাশনের জন্য ময়লাবাহী কয়েকটি ভ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব ভ্যান নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে। যেসব মহল্লাবাসী টাকার অভাবে সামান্যতম চিকিৎসা পায় না, তাদের জন্য খোলা হয়েছে দাতব্য চিকিৎসালয়। প্রতি শুক্রবার সংঘের কার্যালয়ে এর কার্যক্রম চলে।
যৌতুক প্রথা বন্ধ করতেও কাজ করছে সংগঠনটি। অর্থের অভাবে যেসব মেয়ের বিয়ে হয় না, সংঘের দরিদ্র তহবিল থেকে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও এগিয়ে আসেন এ সংঘের সদস্যরা। তখন বিভিন্ন এলাকা থেকে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে তা বিতরণ করা হয়। ১৯৮৮ সালের বন্যায় মানিকগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে এ সংগঠন। পহেলা বৈশাখসহ পূজা-পার্বণ ও ঈদের উৎসবে সংগঠনের কার্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৬ ডিসেম্বরসহ অন্যান্য জাতীয় দিবসে সংঘের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সংবর্ধনার আয়োজনও করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর সংঘের সদস্য ও তাঁদের পরিবার নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিচ্ছে সংগঠনটি।
সবশেষে সংগঠনের সদস্যরা জানান, সরকারি ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল করার ইচ্ছা আছে তাঁদের।
Source:
, ২৩ নভেম্বর ২০১০

No comments:

Post a Comment