Monday, December 6, 2010

নারায়ণগঞ্জের প্রবীণ হাসপাতাল মানব সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত

নারায়ণগঞ্জের প্রবীণ হাসপাতাল মানব সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত
০০ হাবিবুর রহমান বাদল, নারায়ণগঞ্জ

চাষাঢ়া হতে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ সস্তাপুরে একটি সংগঠনের প্রবীণ হাসপাতাল নীরবে নিভৃতে মানবসেবা করে যাচ্ছে। প্রবীণ হাসপাতালটিতে অসহায় আর দুস্থদের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি এ স্থানটি এখন প্রবীণদের আড্ডাস্থল হিসেবেও পরিচিত পেয়েছে।
মাসে একদিন এখানে বিনা ফিতে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। প্রতিদিন বিকালে সেখানে ভীড় করে এলাকার প্রবীণরা। তারা সেখানে বসে একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় আর ছোটখাট নানা ইসু্যতে তোলেন আলোচনার ঝড়। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় প্রায়শই তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। খোলা আকাশের নীচে রোদ বৃষ্টিতে বিড়ম্বনা পেঁৗছায় চরমে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালটিতে স্থান সংকুলন হয় না। ফলে রোগীদের দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান নামক সংগঠনটি এ প্রবীণ হাসপাতালটির কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এটা প্রতিষ্ঠানের ২৩ তম শাখা। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পাঁচ জনের উপদেষ্টা পরিষদ ও ২১ সদস্যের কার্যকরী পরিষদ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক তালুকদার জানান, দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকায় বসবাসরত শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) নজরুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে এলাকায় মহিলা মাদ্রাসা ও দাতব্য চিকিৎসালয়ের নামে ১৪ শতাংশ জমি দান করেন। ওই বছর থেকেই সেখানে একটি মহিলা মাদ্রাসা পরিচালিত হয়ে আসছে। এর দুই বছর পর ৯৮ সালে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান উক্ত স্থানে তাদের কার্য্যক্রম শুরু করে। ওই জমির ৭ শতাংশ মাদ্রাসার কার্যক্রম ও বাকি ৭ শতাংশে চলে সংগঠনটির কার্যক্রম। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল মানবসেবা। এ কারণেই সেখানে প্রবীণ হাসপাতালের নামে দাতব্য চিকিৎসালয় খোলা হয়। নির্মাণ করা হয় একটি ভবন।
৯৮ সালের জুলাই হতে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডা. এস এম মোসাদ্দেক ও রাশিয়া হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডা. জেড আহম্মেদ মিলে প্রতি মাসের শেষ মঙ্গলবার বিকালে বিনা ফিতে উক্ত প্রবীণ হাসপাতালে রোগী দেখতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ডা. জেড আহম্মেদ কানাডায় চলে যান। বর্তমানে ডা. মোসাদ্দেকের সঙ্গে ডেন্টাল সার্জন ডা. শাহেদ আলম মাসের শেষ মঙ্গলবার বিনা ফিতে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করছেন।
এ হাসপাতালে মূলত এলাকার অসহায় ও দুস্থ রোগীরাই বেশী আসেন। যাদের টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য নেই সেসব মানুষের একটি বড় অংশ আসেন এখানে। এ স্থানে বিনা ফিতে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হলেও যেসব রোগীর ওষুধ কেনারও সামর্থ্য নেই তাদেরকে সহায়তা করা হয়ে থাকে।
রোগী দেখা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি প্রবীণ সেবা পুরস্কার করে থাকে। যেসকল পরিবার তাদের বৃদ্ধ পিতা-মাতা বা শ্বশুর-শাশুড়িকে যত্ন ও শ্রদ্ধার সঙ্গে সেবা-যত্ন করে আসছে এমন ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করা হয়। নিয়মিত পোলিও টিকার কার্যক্রমও চলে এ কেন্দ্রে।
মোজাম্মেল আরো জানান, তাদের ইচ্ছা উক্ত স্থানটি প্রবীণদের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। প্রবীণরা যাতে এখানে এসে কিছুটা সময়ের জন্য অন্তত বিনোদনে মত্ত থাকতে পারে সে ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে। এখানে সময় কাটানোর জন্য নিয়মিত পেপার রাখা, দাবা-ক্যারাম বোর্ডসহ অন্যান্য ইনডোর খেলার ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে চিকিৎসাসেবার পরিধি বৃদ্ধির জন্য তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ অতীব জরুরী। এজন্য তিনি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক এম সামছুর রহমান হাসপাতালটি পরির্দশন করে তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।

No comments:

Post a Comment