Tuesday, March 1, 2011

দেশেই বিনামূল্যে কিডনি সংযোজন চলছে, পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই: দাতা হতে হবে নিকটাত্মীয়

দেশেই বিনামূল্যে কিডনি সংযোজন চলছে, পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই
দাতা হতে হবে নিকটাত্মীয়

বশিরুল ইসলাম ॥ আর নয় বিদেশে, দেশেই বিনা টাকায় কিডনি সংযোজন কার্যকম শুরম্ন করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ও ইউরোলজি হাসপাতালে। পাশাপাশি দেশের বেশ কয়েকটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র খরচে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। কোন পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই চলছে একের পর এক কিডনি সংযোজন। জাতীয় কিডনি হাসপাতালে সংযোজিত কিডনি নিয়ে অনেক মানুষ বছরের পর বছর বেঁচে আছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন। ব্রেন ডেথ তথা মৃত ব্যক্তির কিডনি সংযোজনের প্রস্তুতি চলছে হাসপাতালে। একই চিকিৎসা বিদেশে করাতে হলে ব্যয় পড়ে ৮ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
কিডনি সংযোজনপরবর্তী চিকিৎসার অংশ হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হাসপাতালে এসেছেন রাজশাহী বাগমারা উপজেলা কাঁঠালপাড়ার সাহেরা বেগম (৩৮)। তাঁর সঙ্গে রয়েছে প্রিয় সনত্মান মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৩)। দু'টি কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে সাইফুলের জন্য একটি কিডনি দেন মা সাহেরা বেগম। ২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মায়ের দেয়া কিডনি সংযোজন করা হয় সাইফুলের শরীরে। হাসপাতালে ইউরোলজি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ কামরম্নল ইসলাম ও ডা. মোসাঃ রমির ১১৯ নম্বর কক্ষে বসে আলাপ হয় সাহেরা বেগম ও তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। সাহেরা বেগম জনকণ্ঠকে জানান, সনত্মানকে বাঁ পাশের কিডনি দিয়েছি আমি। কিডনি দেয়ার প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেছে। দেখা দেয়নি কোন পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি। হাসপাতালে বিনা টাকায় কিডনি সংযোজন করি এবং সংযোজনপরবর্তী ওষুধের খরচসহ ২ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে বলে তিনি জানান। কিডনি সংযোজনের পর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে বলে হাসিমুখে জানায় সাহেরার ছেলে সাইফুল ইসলাম। ডা. মোঃ কামরম্নল ইসলামও জানান, বর্তমানে তারা দু'জনের স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। চার মাস পর সাইফুল তার আগে মতো সকল কাজকর্ম করতে পারবে।
কিডনি সংযোজনের সফলতার কথা হাসপাতালে পরিচালক অধ্যাপক ডা. জামানুল ইসলাম ভুঁইয়া জনকণ্ঠকে জানান, ২০০৮ সাল থেকে এই হাসপাতালে জীবিত নিকটাত্মীয়ের কিডনি সংযোজন কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে চলে আসছে। এ পর্যনত্ম কিডনিদাতা ও রোগী কোন ধরনের সমস্যায় পড়েননি। প্রতি শনিবার আমরা এই প্রতিষ্ঠানে বিনা টাকায় কিডনি সংযোজন করছি। তবে এক্ষেত্রে কিডনি ডোনার থাকতে হবে। তিনি আরও জানান, দেশে বর্তমানে শুধু জীবিত নিকটাত্মীয়ের মধ্যে কিডনি সংযোজন হচ্ছে। ব্রেন ডেথ তথা মৃত ব্যক্তির কিডনি সংযোজনের প্রস্তুতি চলছে হাসপাতালে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেফ্রোলজি, ইউরোলজি ও এ্যানেস্থেসিওলোজি বিভাগের সমন্বয়ে প্রতি সপ্তাহে একটি করে কিডনি সংযোজন হচ্ছে। এ ছাড়া কিডনি ফাউন্ডেশন, বারডেম হাসপাতাল এবং সম্প্রতি ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়মিতভাবে কিডনি সংযোজন চলছে।
মৃত ব্যক্তি ও জীবিত নিকটাত্মীয়ের যে কোন একটি কিডনি নিয়ে সংযোজন করা যায়। রোগীর কিডনি দু'টি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেলে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় ডায়ালিসিসের। রোগীর উপসর্গের ইতিহাস, রক্তের ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া, ইলেকট্রোলাইট, সনোগ্রাম করে কিডনির অবস্থান ও সাইজ দেখা, জিএফআর অথবা সিআর ইত্যাদি দিক পরীক্ষা করে কিডনি অকেজো নির্ণয় করা হয়। কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো জানার পরই ডায়ালিসিস করার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। পেরিটোনিয়েল ডায়ালিসিস ও হেমোডায়ালিসিস_এ দু'ধরনের ডায়ালিসিসের প্রচলন রয়েছে। তবে হেমোডায়ালিসিস শুরম্ন করার আগে সাধারণত বাঁ হাতের কব্জির ওপরে একটি এ-ভি ফিস্টুলা তৈরি করে নেয়া হয় যা পরিপক্ব হতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। হেমোডায়ালিসিস বা মেশিনের পাশাপাশি রোগীকে ও তাঁর নিকটপরিজনকে রোগ সম্পর্কে ধারণা, চিকিৎসার ভবিষ্যত পরিকল্পনা, সুযোগ-সুবিধা এবং আর্থিক দিক সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হয়। একজন রোগীকে সবদিক বিবেচনা করে যখন কিডনি সংযোজন কর্মসূচীতে যখন মনোনীত করা হয় তখন সেই রোগীকে কিডনি সংযোজনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিডনিদাতা পাওয়া না গেলে ডায়ালিসিস চালু রাখতে হয়। এ জন্য বছরে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়ালিসিস করাতেই প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, নিজেরা কিডনি দেয়ার পরও সিঙ্গাপুরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা, থাইল্যান্ডে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং ভারতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা লাগে সংযোজনের জন্য।

Source: http://www.dailyjanakantha.com
১ মার্চ ২০১১

No comments:

Post a Comment