কিডনি বিকল হয়ে ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয় তৌফিক মারুফবাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজন মানুষ কিডনি বিকল হয়ে মারা যান। এ ছাড়া দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছেন। তার পরও কিডনি রোগের চিকিৎসাব্যবস্থায় লক্ষণীয় উন্নতি নেই। অবস্থা একেবারেই নাজুক। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কিডনি রোগীদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে চিকিৎসাব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. শিফায়েতুল্লাহ এ পরিস্থিতির সঙ্গে একমত পোষণ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশে ক্যান্সার ও হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি। সেই তুলনায় কিডনি চিকিৎসাব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে বলে আমার নিজেরও উপলব্ধি। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ ঘটাতে না পারলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে সাফল্য আসবে না।'
বিএমএর সাবেক সভাপতি ও জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, 'এ দেশে কিডনি রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করা বেশির ভাগ মানুষের জন্যই খুব কঠিন। এর ওপরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেসব পদক্ষেপ রয়েছে, তা-ও নানান অব্যবস্থাপনার কারণে সচল থাকছে না। যন্ত্রপাতি ক্রয়ের অস্বচ্ছতার কারণে অনেক স্থানেই অনেক যন্ত্রপাতি অসময়ে বিকল হয়ে পড়ে।'
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক অ্যান্ড কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ উদ্দিন মাহমুদ দেশে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজন মানুষ কিডনি বিকল হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একজন কিডনি রোগী তাঁর দুটি কিডনিই যখন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিকল হয়ে পড়ে তখনই তিনি এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বেশি টাকা আছে, তাঁরাই হয়তো ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিস বা দেশের বাইরে গিয়ে আরো কোনো উন্নত চিকিৎসার সুবিধা নিতে পারেন। দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে এমন সুবিধা বেশি দিন চালিয়ে নেওয়া একেবারেই দুরূহ।'
ডা. সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'এ দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেসব চিকিৎসা সুবিধা আছে, সেগুলো একে তো পর্যাপ্ত নয়, তার ওপর বিভিন্ন সমস্যার কারণে এসব ব্যবস্থাপনার বেশির ভাগই অকার্যকর। তাই সরকারের উচিত দেশব্যাপী কিডনি চিকিৎসাব্যবস্থাপনা আরো জোরদার করা। এ ক্ষেত্রে প্রাইভেট উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসা উচিত।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, 'যেসব সরকারি হাসপাতালে কিডনি ইউনিট রয়েছে, সেগুলোকে যথাযথভাবে কার্যকর করাসহ নতুন করে বিভিন্ন হাসপাতালে কিডনি চিকিৎসার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া মেডিক্যাল কলেজেও নেফ্রোলজি ও ইউরোলজির বিভাগকে আরো শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি নেই। কোনো কোনো হাসপাতালে ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে অনেকদিন ধরে। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় এ চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল।
কিডনি রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগীর সংখ্যা এবং এর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা সঠিকভাবে গণনা করা হয়ে ওঠে না। কারণ একজন কিডনি রোগী হৃদরোগে মারা গেলে মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ বলেই উল্লেখ করা হয়। কেবল যাঁরা কিডনি রোগের শেষ ধাপে পেঁৗছে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, তাঁদের নামই শুধু লিপিবদ্ধ করা হয় কিডনি রোগে মৃত্যুর তালিকায়।
ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, 'কিডনি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সচেতনতা। আগেভাগেই যদি এ রোগ ও রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়, সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়, তবেই কিডনি বিকল হয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব।'
বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'কিডনি বিকলপর্যায়ের রোগীকে ডায়ালাইসিস এবং পরবর্তী সময়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়। ডায়ালাইসিস এবং প্রতিস্থাপন ব্যয়বহুল হওয়ায় এ দেশের ৯৫ শতাংশ রোগীর পক্ষেই এই চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। শুধু ডায়ালাইসিস (যন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত পরিশুদ্ধ করা) বছরে একজন রোগীর প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া কিডনি পাওয়া সাপেক্ষে কিডনি প্রতিস্থাপনে খরচ কমবেশী পাঁচ লাখ টাকা, পাশাপাশি ওষুধের খরচ চালাতে হবে বাকি জীবন।'
এদিকে ন্যাশনাল কিডনি ডিজেজ অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পরিচালিত ২০০৬-০৯ সাল পর্যন্ত জরিপের ফলাফলে জানা গেছে, কিডনি রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক (৬৫ শতাংশ) হচ্ছে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী। এ ছাড়া ৩০ শতাংশ রয়েছে ৫০ বছরের ওপরে, ৪ শতাংশ রয়েছে পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সের এবং মাত্র ১ শতাংশ রয়েছে এক থেকে চার বছর বয়সের। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালন উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
Source: http://www.kalerkantho.com, 10th march, 2011
শরীয়তপুরে বিনামূল্যে চিকিৎসা পেলেন ৫ শতাধিক দরিদ্র মানুষ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. শিফায়েতুল্লাহ এ পরিস্থিতির সঙ্গে একমত পোষণ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশে ক্যান্সার ও হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি। সেই তুলনায় কিডনি চিকিৎসাব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে বলে আমার নিজেরও উপলব্ধি। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ ঘটাতে না পারলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে সাফল্য আসবে না।'
বিএমএর সাবেক সভাপতি ও জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, 'এ দেশে কিডনি রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করা বেশির ভাগ মানুষের জন্যই খুব কঠিন। এর ওপরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেসব পদক্ষেপ রয়েছে, তা-ও নানান অব্যবস্থাপনার কারণে সচল থাকছে না। যন্ত্রপাতি ক্রয়ের অস্বচ্ছতার কারণে অনেক স্থানেই অনেক যন্ত্রপাতি অসময়ে বিকল হয়ে পড়ে।'
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক অ্যান্ড কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ উদ্দিন মাহমুদ দেশে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজন মানুষ কিডনি বিকল হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একজন কিডনি রোগী তাঁর দুটি কিডনিই যখন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিকল হয়ে পড়ে তখনই তিনি এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বেশি টাকা আছে, তাঁরাই হয়তো ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিস বা দেশের বাইরে গিয়ে আরো কোনো উন্নত চিকিৎসার সুবিধা নিতে পারেন। দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে এমন সুবিধা বেশি দিন চালিয়ে নেওয়া একেবারেই দুরূহ।'
ডা. সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'এ দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেসব চিকিৎসা সুবিধা আছে, সেগুলো একে তো পর্যাপ্ত নয়, তার ওপর বিভিন্ন সমস্যার কারণে এসব ব্যবস্থাপনার বেশির ভাগই অকার্যকর। তাই সরকারের উচিত দেশব্যাপী কিডনি চিকিৎসাব্যবস্থাপনা আরো জোরদার করা। এ ক্ষেত্রে প্রাইভেট উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসা উচিত।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, 'যেসব সরকারি হাসপাতালে কিডনি ইউনিট রয়েছে, সেগুলোকে যথাযথভাবে কার্যকর করাসহ নতুন করে বিভিন্ন হাসপাতালে কিডনি চিকিৎসার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া মেডিক্যাল কলেজেও নেফ্রোলজি ও ইউরোলজির বিভাগকে আরো শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি নেই। কোনো কোনো হাসপাতালে ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে অনেকদিন ধরে। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় এ চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল।
কিডনি রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগীর সংখ্যা এবং এর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা সঠিকভাবে গণনা করা হয়ে ওঠে না। কারণ একজন কিডনি রোগী হৃদরোগে মারা গেলে মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ বলেই উল্লেখ করা হয়। কেবল যাঁরা কিডনি রোগের শেষ ধাপে পেঁৗছে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, তাঁদের নামই শুধু লিপিবদ্ধ করা হয় কিডনি রোগে মৃত্যুর তালিকায়।
ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, 'কিডনি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সচেতনতা। আগেভাগেই যদি এ রোগ ও রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়, সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়, তবেই কিডনি বিকল হয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব।'
বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'কিডনি বিকলপর্যায়ের রোগীকে ডায়ালাইসিস এবং পরবর্তী সময়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়। ডায়ালাইসিস এবং প্রতিস্থাপন ব্যয়বহুল হওয়ায় এ দেশের ৯৫ শতাংশ রোগীর পক্ষেই এই চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। শুধু ডায়ালাইসিস (যন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত পরিশুদ্ধ করা) বছরে একজন রোগীর প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া কিডনি পাওয়া সাপেক্ষে কিডনি প্রতিস্থাপনে খরচ কমবেশী পাঁচ লাখ টাকা, পাশাপাশি ওষুধের খরচ চালাতে হবে বাকি জীবন।'
এদিকে ন্যাশনাল কিডনি ডিজেজ অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পরিচালিত ২০০৬-০৯ সাল পর্যন্ত জরিপের ফলাফলে জানা গেছে, কিডনি রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক (৬৫ শতাংশ) হচ্ছে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী। এ ছাড়া ৩০ শতাংশ রয়েছে ৫০ বছরের ওপরে, ৪ শতাংশ রয়েছে পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সের এবং মাত্র ১ শতাংশ রয়েছে এক থেকে চার বছর বয়সের। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালন উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
Source: http://www.kalerkantho.com, 10th march, 2011
শরীয়তপুরে বিনামূল্যে চিকিৎসা পেলেন ৫ শতাধিক দরিদ্র মানুষ
কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির (ক্যাম্পস) উদ্যোগে শরীয়তপুর পৌরসভায় দিনব্যাপী ফ্রি কিডনি ক্যাম্প ও সচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে ঢাকা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ কিডনি চিকিৎসকসহ ১০ চিকিৎসক শরীয়তপুরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ৫ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেন এবং এর মাধ্যমে দুই শতাধিক রোগীর কিডনি রোগ নির্ণয়, ডায়াবেটিস ও ইউরিন পরীক্ষা কা হয়।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ সানোয়ার হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদ, সিভিল সার্জন ডা. মোঃ গোলাম সারোয়ার, পুলিশ সুপার একেএম শহিদুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল ফজল মাস্টার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ সুলতান হোসেন মিয়া, ক্যাম্পসের মহাপরিচালক নাসরিন বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মির্জা এ সাইদ প্রমুখ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
Source: http://www.samakal.com.bd
১৭ জানুয়ারি ২০১১
Related Link:
No comments:
Post a Comment