Friday, July 1, 2011

কালাইয়ের কিডনি বিক্রয়কারীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প চালু

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:
দৈনিক করতোয়া ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে দরিদ্রতা, প্রচন্ড অভাব, বিভিন্ন এনজিওর কিস্তির চাপ আর দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের টাকার যোগান দেয়ার তাগিদে জয়পুরহাটের কালাইয়ে কিডনি বিক্রির মতো মারাত্মক ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার খবর প্রচার হওয়ায় প্রশাসনের টনক নড়ে। কালাই উপজেলার লোকজনের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়। যাতে করে এ ধরনের কাজ থেকে এলাকাবাসী বিরত থাকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়, এ এলাকার প্রায় ৩শ' লোক এপর্যন্ত তাদের কিডনি বিক্রি করেছেন। বর্তমানে অপেক্ষমান আছেন আরও প্রায় ৩০-৩৫ জন । ফলে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দেয়। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই,আহম্মেদাবাদ ও উদয়পুর ইউনিয়নের কিডনি বিক্রয়কারীদের জন্য গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে দুটি ক্যাম্পে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প চালু করা হলেও অনেকেই ভয়ে ক্যাম্পে উপস্থিততো হননিই, অধিকন্তু তারা আত্মগোপন করে থাকেন। ক্যাম্প দুটি হলো যথাক্রমে বৈরাগীহাট চত্ত্বর ও মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। ক্যাম্প দুটিতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মোট ১১ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এরা হলেন আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের মৃত ইয়াসিন আলী ম লের ছেলে সেকেন্দার আলী ম ল(২৮),উদয়পুর ইউনিয়নের বাগইল গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান(২৬), মাত্রাই ইউনিয়নের ভেরে ী গ্রামের একই পরিবারের পিতা জাহান আলম, ছেলে মেহেরুল, পুত্রবধূ সেলিনা এবং ছোট ছেলে শাহারুল ইসলাম, একই গ্রামের ফারুকের স্ত্রী মাহমুদা বেগম, মফিদুল ইসলাম, আইনূল ইসলাম, আব্দুল ওহাব এবং তার স্ত্রী রেবেকা বেগম। এধরনের অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট চক্র জড়িত আছে বলে এলাকার সচেতন মহল ধারণা করছেন। সরেজমিন উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের মৃত ইয়াসিন আলীর ছেলে সেকেন্দার আলী (২৮), মাত্রাই ইউনিয়নের সাঁতার গ্রামের সৈয়দ আলী, ভেরেন্ডি গ্রামের জাহা আলম ও মেহেরুল, বহুতি গ্রামের শুকুর আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সকলেই কোন না কোনভাবে অভাবের তাড়নায় দিনযাপন করছিলেন। কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তির চাপে ছিলেন, কেউবা চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে টাকা কর্জ করেছিলেন। কেউ কেউ তাসপাশা আবার কেউ কেউ মাদকসহ নানা নেশা করে জমিজমা খুইয়ে ধারদেনাগ্রস্ত হয়েছিলেন। এমতাবস্থায় উপায়ন্ত না দেখে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাদের এমন অভাবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিডনি বিক্রি চক্রের একটি মহল দীর্ঘ দিন থেকে সুকৌশলে অনেককে কিডনি বিক্রি করতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু কিডনি বিক্রিতেরা তাদের মূল্যবান কিডনির যথার্থ মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। আর মোটা অংকের মুনাফা লোটে দালাল চক্রের লোকেরা। কিডনি বিক্রেতাদের দেয়া হয় দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু দালালরা তাদের কিডনি বিক্রি করে দেয় ৭-৮ লাখ টাকায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এলাকার গণমানুষ অমানবিক এ কার্যকলাপ বন্ধের জন্য দ্রুত সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করলে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক এলাকায় কিডনি কিক্রিকারী চক্রের অপতৎপরতা বন্ধে এবং কিডনি বিক্রয়কারী ভিকটিমদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য এলাকায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপনসহ আজীবন তাদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।চিকিৎসা ক্যাম্পে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে রয়েছেন কনসালট্যান্ট সার্জন ও ইউরোলজিস্ট ডা. মু. ইয়াছের আরাফাত। এ সময় জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস,ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোজাম্মেল হক, কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার এবং ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক (টিএইচএ) ডা. আবু হোসেনসহ তিনটি ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment