Monday, September 5, 2011

Low or Free Cost Treatment in Probin Hospital

প্রবীণদের সেবায় অনন্য এক হাসপাতাল

নাঈম আহমেদ, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১০

প্রবীণদের চিকিত্সা সেবার জন্য অনন্য এক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রবীণ হাসপাতাল। প্রতিদিন এ হাসপাতালে অসংখ্য প্রবীণ আসেন নানা রকম রোগের চিকিত্সার জন্য। ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এ হাসপাতালে সেবার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রবীণদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ডায়াবেটিস বিভাগ চালু হয়েছে। এ বছর হাসপাতালে কার্ডিওলজি, প্যাথলজি, ফিজিওথেরাপি বিভাগ আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মেডিসিন বিভাগ (জেরিয়াট্রিক; পুরুষ; মহিলা), নাক-কান-গলা বিভাগ, দন্ত বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, ফিজিওথেরাপি ও প্যাথলজি বিভাগ খোলা রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অবশ্য সার্জারি বিভাগে অপারেশন থাকলে তা অফিস সময়ের পর যে কোনো সময় করার ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ এখন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হচ্ছে। তাতে আগত রোগী সেবা পেয়ে থাকেন। প্রতিটি বিভাগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা রোগীদের পরীক্ষা ও চিকিত্সা সেবা দেয়া হয়। নতুন অভিজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে এরই মধ্যে প্রতিটি বিভাগকে শক্তিশালী করা হয়েছে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগকে তিনটি স্তরে ভাগ করে বয়স্ক, অপ্রাপ্ত এবং মহিলাদের জন্য পৃথক সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে রোগ-ব্যাধি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাধারণ উপদেশ ও চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে। ফিজিওথেরাপি বিভাগে উন্নত ধরনের যন্ত্র দ্বারা আরও উন্নত চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া এই বিভাগটি পর্দার পরিবর্তে থাই-অ্যালুমিনিয়াম ও অস্বচ্ছ গ্লাস দিয়ে সাজানো হয়েছে।
হৃদরোগের রোগীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ার ফলে কালার ডপলার, ২৪ ঘণ্টা হল্টার ইসিজি, ইকো কার্ডিওগ্রাম ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিত্সক দ্বারা রোগীদের চক্ষু পরীক্ষা করা হয় ও ব্যবস্থাপত্র প্রদান এবং প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করা হয়। এ বছর স্বতন্ত্র একটি চক্ষু ইউনিট সম্পৃক্ত করা হয়েছে, এ ইউনিটের সহায়তায় শহর ও গ্রামীণ প্রবীণ ব্যক্তিদের চক্ষু অপারেশন হচ্ছে।
দন্ত বিভাগে রোগীদের দাঁত লাগানো, রুট ক্যানেল, চিকিত্সাসহ সব রকমের অপারেশন করা, নাক, কান, গলা রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্র দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে সার্জারি হয়, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয়ে সব রকমের সাধারণ ও বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা, এক্স-রে বিভাগে বিশেষজ্ঞ রেডিওলজিস্ট দ্বারা রিপোর্ট প্রস্তুত ও সরবরাহ, আলট্রাসনোগ্রাম, প্রতিদিন আয়ুর্বেদি ও ইউনানী চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। অর্থোপেডিক বিভাগে একজন অভিজ্ঞ প্রফেসর বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
আন্তঃবিভাগে হাসপাতাল কার্যক্রম নিয়মিত : এখানে প্রতিদিন মাত্র ১০০ টাকা ফি দিয়ে সাধারণ বেডে ও প্রতি বেডে ৬০০ টাকা ফি দিয়ে ক্যাবিনে রোগীরা থাকতে পারেন। হাসপাতালের অভিজ্ঞ ডাক্তার রোগীদের সেবায় সব সময় নিয়োজিত আছেন। তাছাড়া অভিজ্ঞ নার্স ও ওয়ার্ডবয় রোগীদের সেবা যত্ন করে থাকেন। প্রবীণ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ সার্জন দ্বারা বিভিন্ন ধরনের অপারেশন করা হচ্ছে। প্রবীণ হাসপাতালে বৈদ্যুতিক জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে যাতে করে বিদ্যুতের অসুবিধার জন্য রোগীদের কোনো কষ্ট পেতে না হয়। এছাড়াও সংঘের দু’টি অ্যাম্বুলেন্স আছে, যা নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধের মাধ্যমে প্রবীণ রোগীদের যাতায়াত সেবা দিয়ে থাকে।
বৈকালিক চিকিত্সা সেবা : গত মে ২০০৭ সাল থেকে প্রবীণ হাসপাতালে বৈকালিক শিফটের জন্য মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও চর্ম— এ চারটি বিভাগ খোলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ফিজিওথেরাপি, প্যাথলজিসহ অন্যান্য বিভাগ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিনামূল্যে চিকিত্সা ও ওষুধ বিতরণ : এখানে উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানের হাসপাতালে ৩০ শতাংশ দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে বিনামূল্যে চিকিত্সা ও ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। গরিব ও অসহায় রোগীদের ওষুধ এবং বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, এক্স-রে ও ফিজিওথেরাপি চিকিত্সা বিনামূল্যে করা হয়। ২০০৯ সালে হাসপাতাল থেকে মোট ৩,৭৬৭ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে আগত প্রবীণ রোগীদের রেয়াতের জন্য প্রায় ৭১,৬৬৫ টাকা খরচ করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের কল্যাণ তহবিল থেকে গরিব রোগীদের এবং কেন্দ্র, শাখার গরিব ও অসহায় প্রবীণদের স্বল্প পরিমাণে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হয়। এর জন্য প্রতিষ্ঠানকে আরও প্রায় ৯২,৩৯১ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী ২০০৪ সালে ৩৯,০২৬ জন, ২০০৫ সালে ৪৯,১৩১ জন, ২০০৬ সালে ৫১,৫৭৯ জন, ২০০৭ সালে ৫১,৬০৯ জন, ২০০৮ সালে ৪০,৬৯৬ জন, ২০০৯ সালে ৪০,৮৫২ জন রোগী এ হাসপাতালে চিকিত্সা সেবা পেয়েছেন।
Source: Daily Amardesh